১. খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি

খাদ্য নিরাপত্তার নীতি

খাদ্য নিরাপত্তার মূল নীতি ৩টি:

  • প্রাপ্তি (Availability)
  • সামর্থ্য (Access)
  • ব্যবহার (Use)

রাসায়নিক সার

  • ইউরিয়া: NH2-CO-NH2
  • TSP (টিএসপি): Ca(H2PO4)2
  • DAP (ডিএপি): (NH4)2HPO4

পুষ্টি ও ক্যালরি

  • BMR (শক্তির হিসাব): ঘুম (BMR=1), পড়া (BMR=1.2), ভারী কাজ (BMR=6)।
  • ক্যালরি চাহিদা: ওজন (kg) x 30 cal (গড়ে)।
  • শক্তির অনুপাত: চর্বি : প্রোটিন : CHO = ১ : ১ : ৪।

ভিটামিনের বিবরণ

ভিটামিন দ্রবণীয়তা রাসায়নিক নাম অভাবজনিত রোগ
ভিটামিন Aচর্বিরেটিনলরাতকানা
ভিটামিন Dচর্বিক্যালসিফেরলরিকেটস (শিশু)
ভিটামিন Eচর্বিআলফা টোকোফেরলমাংসপেশিতে টান
ভিটামিন Kচর্বিফিলোকুইনোনরক্তক্ষরণ
ভিটামিন Cপানিঅ্যাসকরবিক এসিডস্কার্ভি
ভিটামিন B1পানিথায়ামিনবেরিবেরি
ভিটামিন B2পানিরিবোফ্লাভিনডার্মাটাইটিস, জিহ্বায় ঘা
ভিটামিন B3পানিনায়াসিনপেলাগ্রা
ভিটামিন B6পানিপিরিডক্সিনডার্মাটাইটিস
ভিটামিন B9পানিফলিক এসিডরক্তশূন্যতা
ভিটামিন B12পানিকোবালামিনরক্তশূন্যতা

২. খাদ্য সংরক্ষণ

খাদ্য নষ্ট হয় প্রধানত ৩টি কারণে— জীবাণু, এনজাইম এবং ধাতব আয়ন।

প্রাকৃতিক সংরক্ষক

  • লবণ (সল্টিং): ৭-৮% বা ১৫-২০% ঘনমাত্রায়।
  • চিনি: ৬৫-৭০% ঘনমাত্রায়।
  • সরিষার তেল: জীবাণুর স্পর্শ থেকে দূরে রাখে।
  • হলুদ: পচনরোধ করে ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট (AO)।
  • পিকলিং: আচার তৈরি করা।

কৃত্রিম / রাসায়নিক সংরক্ষক

  • অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল: সোডিয়াম বেনজয়েট, সালফাইট, NaNO2
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট (AO): BHA, BHT, TBHQ।
  • চিলেটিং এজেন্ট: EDTA।
  • নিষিদ্ধ: ক্যালসিয়াম কার্বাইড (CaC2) ও ফরমালিন।

৩. ক্যানিং (কৌটাজাতকরণ)

  • ওয়াটার বাথ ক্যানিং: ফলের জন্য (pH < 4.6), ৮২-১০০°C।
  • প্রেসার ক্যানিং: সবজি/মাংসের জন্য (pH > 4.6), ১১৫-১২১°C।
  • পুষ্টি: কাঁটাসহ ক্যানিংকৃত মাছ ক্যালসিয়ামের (Ca) উৎস।
  • মাছ-মাংস: প্রোটিন (১৪-২০%) এবং পানি (৭৫%)।
খাদ্যদ্রব্য ক্যানিং তরল
আম, আনারস, কাঁঠাল ৩০-৪০% চিনি + ০.২৫% সাইট্রিক এসিড
টমেটো ২% লবণ + ৫% চিনি
মাছ ও মাংস ২% লবণ + ২% চিনি (১২১°C)

৪. কলয়েড ও দ্রবণ

দ্রবণ

একমাত্র সমসত্ত্ব মিশ্রণ। (উদাহরণ: লবণ-পানি)

কলয়েড

অসমসত্ত্ব মিশ্রণ, টিন্ডাল প্রভাব ও ব্রাউনীয় গতি দেখায়। ( উদাহরণ: দুধ, রক্ত)

সাসপেনশন

অস্থায়ী মিশ্রণ। (উদাহরণ: মিল্ক অব ম্যাগনেসিয়া, BaSO4)

  • পেপটাইজেশন: কলয়েড তৈরির পদ্ধতি।
  • কোয়াগুলেশন: কলয়েডকে থিতিয়ে ফেলার প্রক্রিয়া।
  • হার্ডি-শূলজে নিয়ম: বিপরীত চার্জের চার্জ যত বেশি, কোয়াগুলেশন ক্ষমতা তত বেশি (Al3+ > Fe2+ > Na+)।
  • সাসপেনশন ব্যবহার: BaSO4 (অন্ত্রের ইমেজিং), ক্যালামিন লোশন।

কলয়েডের শ্রেণীবিভাগ

শ্রেণি দ্রব (কম) মাধ্যম (বেশি) উদাহরণ
অ্যারোসলকঠিন / তরলগ্যাসধোঁয়া, ধুলো, কুয়াশা, মেঘ
ফোমগ্যাসতরল / কঠিনসাবানের ফেনা, কেক, ঝামা পাথর
জেলতরলকঠিনজেলি, পনির, দই, মাখন, জুতোর কালি
ইমালশনতরলতরল / কঠিনদুধ, শ্যাম্পু, ক্রিম, পানিতে তেল
সলকঠিনতরলগোল্ড সল, রং, মিল্ক অব ম্যাগনেসিয়া

৫. দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য

দুধের বৈশিষ্ট্য

  • pH: ৬.৬ - ৬.৯
  • আপেক্ষিক গুরুত্ব: ১.০২৯ - ১.০৩৯ (ল্যাকটোমিটার)
  • প্রোটিন: ক্যাজিন (ফসফোপ্রোটিন)
  • শর্করা: ল্যাকটোজ (মানুষ ৭.১%, গাভী ৪.৮%)
  • পুষ্টি: Ca ও Vit A বেশি; Cu, Fe, Vit C, Vit D কম।

পাস্তুরায়ন

  • HOLDER: ৬৩-৬৫°C (৩০ মিনিট)
  • HTST: ৭৪°C (১৫ সেকেন্ড)
  • UHT: ১৩৮°C (২ সেকেন্ড)
  • pH নিয়ন্ত্রণ: NaHCO3 ব্যবহৃত হয়।

অন্যান্য

  • মাখন: ~৭৩০ kcal, ভিটামিন A বেশি।
  • ক্রিম (ঘন): পানিতে তেল (W/O)
  • লোশন (তরল): তেলে পানি (O/W)

৬. ভিনেগার

ভিনেগার পরিচিতি

  • সংজ্ঞা: ইথানয়িক এসিডের (CH3COOH) ৬-১০% জলীয় দ্রবণ।
  • গ্লেসিয়াল অ্যাসিটিক এসিড: ৯৯.৯% বিশুদ্ধ ইথানয়িক এসিড।
  • উৎস: আখ বা খেজুরের রসে ১৬-২০% সুক্রোজ থাকে।
  • কার্যকারিতা: pH ২-৩, যা খাদ্য সংরক্ষণ করে।

ভিনেগার প্রস্তুতি (ধাপ)

  1. সুক্রোজ → (ইনভার্টেজ) → গ্লুকোজ + ফ্রুক্টোজ
  2. গ্লুকোজ → (জাইমেজ) → ইথানল + CO2
  3. ইথানল + O2 → (মাইকোডার্মা অ্যাসিটি) → ইথানয়িক এসিড

৭. প্রসাধনী ও পরিষ্কারক

গোলাপ জল

হাইড্রোসল, স্টিম পাতন পদ্ধতিতে তৈরি।

টেলকম পাউডার

মূল উপাদান: টেলক 3MgO.4SiO2.H2O

ভেনিশিং ক্রিম

উপাদান: স্টিয়ারিক এসিড।

কোল্ড ক্রিম

উপাদান: তেল, মোম ও বোরাক্স।

লিপস্টিক

পিগমেন্ট: TiO2, উপাদান: মোম ও তেল।

মেহেদী (হেনা)

উপাদান: ল্যাসোন (২-হাইড্রক্সি-১,৪-ন্যাপথাকুইনোন)।

গ্লাস ক্লিনার

উপাদান: NH4OH, আইসো-প্রোপাইল অ্যালকোহল।

টয়লেট ক্লিনার

উপাদান: NaOH, ফেনল, ব্লিচ: Ca(OCl)Cl

৮. প্রাকৃতিক গ্যাস

গ্যাসের পরিচিতি

  • প্রথম আবিষ্কৃত: সিলেটের ছাতক। (মোট ২৭টি)
  • সবচেয়ে বড়: তিতাস।
  • সবচেয়ে বেশি মিথেন: রশীদপুর (৯৮%)।
  • Sour Gas (টক): H2S > 5.7 mg/m³
  • Sweet Gas (মিষ্টি): H2S < 5.7 mg/m³
মনে রাখার কৌশল (গ্যাসের সংযুক্তি):

"নবীন কবি পাপন এসেছে ইমিকে দেখতে।" (মিথেন > ইথেন > প্রোপেন...)

মনে রাখার কৌশল (গ্যাসের ব্যবহার):

"বশির বসে গাড়িতে চা খাচ্ছে"

(বিদ্যুৎ (৫৫%) > শিল্প (১৭%) > বাসা (১২%) > সার (১০%) > গাড়ি (৫%) > চা-বাগান (১%))

প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার (শতাংশ)

55%
বিদ্যুৎ
17%
শিল্প
12%
বাসা
10%
সার
5%
গাড়ি (CNG)
1%
চা-বাগান

৯. কয়লা ও ইউরিয়া

কয়লা (Black Diamond)

  • প্রধান উপাদান: Fixed Carbon।
  • রূপান্তর: পিট → লিগনাইট → বিটুমিনাস → অ্যানথ্রাসাইট।
  • বাংলাদেশের সেরা: বিটুমিনাস।
  • তরলীকরণ: বার্জিয়াস (কয়লা+H₂), ফিশার-ট্রপস (ওয়াটার গ্যাস)।
  • কয়লা থেকে গ্যাস: ওয়াটার গ্যাস (CO+H2), সিনগ্যাস (CO+3H2), প্রডিউসার গ্যাস (CO+N2)।

ইউরিয়া সার (NH2CONH2)

  • নাইট্রোজেন: ৪৬%।
  • হেবার পদ্ধতি (NH₃ প্রস্তুতি):
    • বিক্রিয়ক: N2 : H2 = 1 : 3
    • তাপ: ৪৫০-৫৫০°C, চাপ: ২০০ atm
  • ইউরিয়া প্রস্তুতি:
    • বিক্রিয়ক: CO2 : NH3 = 1 : 2
    • তাপ: ১৮০-১৯০°C, চাপ: ১২০-১৩০ atm

১০. কাঁচ ও সিরামিক

কাঁচ শিল্প

  • কাঁচামাল: SiO2, Na2CO3, CaCO3
  • ধাপ: গলন → আকৃতি → অ্যানিলিং (কোমলায়ন) → ফিনিশিং।
  • কাঁচের উপর নকশা (Etching): HF ব্যবহৃত হয়।
  • Soft Glass: Na2O.CaO.SiO2 (বোতল)
  • Hard Glass: K2O.CaO.SiO2 (ল্যাব যন্ত্রপাতি)
  • Pyrex: বোরোসিলিকেট কাঁচ (ল্যাব যন্ত্রপাতি)।
  • Flint: লেড (Pb) সিলিকেট (চশমা, অপটিক্যাল)।
  • Crookes: CeO2 (UV-প্রতিরোধী চশমা)।
  • Laminated Glass: মোটরগাড়ির কাঁচ।

সিরামিক শিল্প

  • কাঁচামাল: কেওলিন (Al2O3.2SiO2.2H2O), সিলিকা, ফেলোস্পার।
  • বিগলক (Flux): ফেলোস্পার, ক্রায়োলাইট, বোরাক্স।
  • উৎপাদন: Slip Casting → Drying → Biscuit Firing → Glazing।
  • বিস্কুট ফায়ারিং: শুষ্ক সামগ্রীকে মসৃণ ও ছিদ্রমুক্ত করা হয়।
  • মূল উপাদান: মুলাইট (3Al2O3.2SiO2), ক্রিস্টোবোলাইট।

১১. পেপার ও সিমেন্ট

পাল্প ও পেপার শিল্প

  • মূল উপাদান: সেলুলোজ।
  • পদ্ধতি: ক্রাফট (সালফেট) পদ্ধতি।
  • যন্ত্র: ফোরড্রিনিয়ার মেশিন।
  • ফিলার (পূরক): টেলক, TiO2
  • সাইজিং এজেন্ট: রেজিন, ফিটকিরি (Alum)।
  • বিরঞ্জক: Ca(OCl)Cl, O3, H2O2
  • কুকিং লিকার (সাদা): NaOH + Na2S
  • ব্ল্যাক লিকার: রান্নার পর বর্জ্য তরল।

সিমেন্ট শিল্প

  • প্রধান ধরণ: পোর্টল্যান্ড সিমেন্ট।
  • কাঁচামাল: ক্যালক্যারিয়াস (চুনাপাথর) ও আরজেলিয়াস (কাদা)।
  • ধাপ: চূর্ণ → ক্লিংকার (১৫০০°C) → সিমেন্ট।
  • জিপসাম (CaSO4.2H2O): জমাট বাঁধা মন্থর করে।
  • দ্রুত জমাট বাঁধার উপাদান: C3A (ট্রাইক্যালসিয়াম অ্যালুমিনেট)।

১২. চামড়া ট্যানিং

ট্যানিং প্রক্রিয়ার ধাপসমূহ

চামড়ার মূল প্রোটিন: কোলাজেন (৮৫%)।

  1. কিউরিং (Curing): লবণ (NaCl) দিয়ে সংরক্ষণ।
  2. সোকিং (Soaking): পানিতে ভিজিয়ে ময়লা দূর করা (১২-২৪ ঘণ্টা)।
  3. লাইমিং (Liming): চুন (Ca(OH)2) ও Na2S দিয়ে লোম দূর করা।
  4. ডি-লাইমিং (Deliming): NH4Cl দিয়ে চুন দূর করা।
  5. বেটিং (Bating): ট্রিপসিন (Trypsin) এনজাইম দিয়ে নরম করা।
  6. পিকলিং (Pickling): লবণ ও H2SO4 দ্রবণে ডুবানো (pH ৪-৪.৩)।
  7. ট্যানিং (Tanning): ক্রোম (Cr3+) লবণ দিয়ে স্থায়ী করা।
মনে রাখার কৌশল (শিল্পের পরিভাষা):
  • কাঁচ: কিউলেট, অ্যানিলিং, ইচিং।
  • সিরামিক: স্লিপ, ফিল্টার কেক, বিস্কুট ফায়ারিং, গ্লেজিং।
  • পেপার: ক্রাফট পদ্ধতি, কুকিং লিকার, ব্ল্যাক লিকার, সাইজিং, ফিলার।
  • সিমেন্ট: ক্লিংকার, স্লারি, বল মিল।
  • চামড়া: কিউরিং, সোকিং, লাইমিং, বেটিং, পিকলিং, জ্যাকিং।

১৩. ন্যানো প্রযুক্তি

ন্যানো কণা

  • আকার: ১-১০০ ন্যানোমিটার (nm)।
  • শ্রেণীবিভাগ: ন্যানোলেয়ার (1D), ন্যানোওয়্যার (2D), ন্যানোপার্টিকেল (3D)।
  • ফুলারিন (বাকিবল): C60
  • গ্রাফিন: কার্বনের দ্বি-মাত্রিক স্তর।
  • কার্বন ন্যানোটিউব (CNT): ইস্পাত অপেক্ষা ১০০ গুণ শক্ত।

ন্যানো কণার ব্যবহার

  • ন্যানো-সিলভার (Ag): ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধক।
  • আয়রন অক্সাইড (Fe2O3): আর্সেনিক (As) দূর করে, MRI।
  • ZnOTiO2: সানস্ক্রিন (ক্যান্সার প্রতিরোধ)।
  • কোয়ান্টাম ডটস: MRI, ফটোসেলের দক্ষতা বৃদ্ধি।

১৪. জৈব যৌগের সূচনা

প্রাচুর্যের কারণ

  • ক্যাটেনেশন: কার্বনের স্ব-বন্ধন ধর্ম।
  • সমানুকরণ: একই আণবিক সংকেত, ভিন্ন গঠন।
  • পলিমারকরণ: মনোমার থেকে পলিমার গঠন।

ফুলারিন (C60)

  • আকৃতি: বাকিবল / ভূ-গোলক।
  • সংকরায়ন: sp2
  • বৈশিষ্ট্য: বিদ্যুৎ পরিবাহী।

হেটারোসাইক্লিক যৌগ

  • পাইরোল: C4H4NH
  • ফিউরান: C4H4O
  • থায়োফিন: C4H4S
  • পিরিডিন: C5H5N (ব্যতিক্রম: ৩টি দ্বিবন্ধন)

সংকরায়ন (Hybridization)

সংকরায়ন s-চরিত্র বন্ধন কোণ C-C দৈর্ঘ্য আকৃতি
sp3২৫%১০৯.৫°0.154 nmচতুস্তলকীয়
sp2৩৩.৩%১২০°0.134 nmসমতলীয় ট্রাইগোনাল
sp৫০%১৮০°0.120 nmসরলরৈখিক

১৫. সমানুতা (Isomerism)

গাঠনিক সমানুতা

  • মেটামারিজম: ইথার, কিটোন (কার্যকরী মূলকের উভয় পাশে কার্বন সংখ্যার ভিন্নতা)।
  • টটোমারিজম (গতিশীল): কিটো-ইনল সমানুতা। (শর্ত: α-হাইড্রোজেন থাকতে হবে)।
মনে রাখার কৌশল:
  • কার্যকরী মূলক (কাশি): কার্বক্সিলিক এসিড-এস্টার, সায়ানাইড-আইসোসায়ানাইড।
  • মেটামারিজম (ইথার FM Radio): ইথার, কিটোন (FM = কার্যকরী মূলক)।
  • টটোমারিজম (ACO FM): অ্যালডিহাইড, কিটোন (FM = কার্যকরী মূলক)।

স্টেরিও (ত্রিমাত্রিক) সমানুতা

  • জ্যামিতিক (সিস-ট্রান্স): অ্যালকিন ও চাক্রিক যৌগে দেখা যায়। (শর্ত: C=C তে ঘূর্ণন সম্ভব নয়)।
  • সিস (ম্যালেয়িক এসিড): গলনাঙ্ক কম, সুস্থিতি কম, বাকি সব বেশি।
  • ট্রান্স (ফিউমারিক এসিড): গলনাঙ্ক বেশি, সুস্থিতি বেশি।
  • আলোক সক্রিয়: কাইরাল কার্বন (C*) থাকে, দর্পণ প্রতিবিম্ব অ-উপরিস্থাপনীয় হয়।
  • এনানশিওমার: পরস্পর দর্পণ প্রতিবিম্ব (d ও l)। (যেমন: ল্যাকটিক এসিড)।
  • মেসো যৌগ: কাইরাল কার্বন থাকা সত্ত্বেও আলোক নিষ্ক্রিয় (যেমন: টারটারিক এসিড)।
  • ডায়াস্টেরিওমার: স্টেরিও সমানু কিন্তু দর্পণ প্রতিবিম্ব নয়।

১৬. বিকারক ও বিক্রিয়া

ইলেকট্রোফাইল (EP)

ইলেকট্রনের প্রতি আসক্তি (অষ্টক সংকোচন)।

H+, NO2+, SO3, AlCl3, BF3

নিউক্লিওফাইল (NP)

নিউক্লিয়াসের প্রতি আসক্তি (মুক্তজোড় e⁻ দাতা)।

OH-, CN-, H2O, NH3, R-OH

ফ্রি র‍্যাডিক্যাল

সুষম ভাঙনে সৃষ্ট, আধানহীন, বিজোড় e⁻ যুক্ত।

অ্যালকেনের হ্যালোজিনেশন।

বিভিন্ন ক্রম (Stability / Reactivity)

  • কার্বোক্যাটায়ন স্থায়িত্ব: 3° > 2° > 1° (SN1, E1)
  • কার্বানায়ন স্থায়িত্ব: 1° > 2° > 3° (SN2)
  • অ্যালকোহলের অম্লধর্ম: 1° > 2° > 3°
  • অ্যামিনের ক্ষারধর্ম: 2° > 1° > 3° > NH3 (অ্যালিফেটিক)

১৭. অ্যালকেন (CnH2n+2)

পরিচিতি ও প্রস্তুতি

  • অন্য নাম: প্যারাফিন (আসক্তিহীন)।
  • সংকরায়ন: sp3, চতুস্তলকীয় (১০৯.৫°)।
  • উটর্জ বিক্রিয়া (Wurtz): R-X + Na → R-R (কার্বন সংখ্যা দ্বিগুণ)।
  • ডিকার্বক্সিলেশন: R-COONa + NaOH(CaO) → R-H (কার্বন হ্রাস)।
  • ক্লিমেনসন বিজারণ: কার্বনিল যৌগ (C=O) → CH2 (Zn-Hg, গাঢ় HCl দ্বারা)।
  • গ্রিগনার্ড থেকে: R-MgX + H2O → R-H

বিক্রিয়া ও ব্যবহার

  • প্রধান বিক্রিয়া: প্রতিস্থাপন (ফ্রি র‍্যাডিক্যাল)।
  • হ্যালোজিনেশন: R-H + Cl2 → R-Cl + HCl (UV আলোর উপস্থিতিতে)।
  • ক্লোরোফর্ম (CHCl3): চেতনানাশক। বাদামী বোতলে 1% ইথানলসহ রাখা হয়, কারণ বায়ুতে বিষাক্ত ফসজিন (COCl2) গ্যাস তৈরি করে।
  • নকিং (Nocking): হ্রাস করতে TEL (Pb(C2H5)4) ব্যবহৃত হয়।

১৮. অ্যালকিন (CnH2n)

পরিচিতি ও প্রস্তুতি

  • অন্য নাম: অলেফিনস (তেল উৎপাদনকারী)।
  • সংকরায়ন: sp2, ত্রিভুজাকার (১২০°)।
  • সমানুতা: জ্যামিতিক (সিস-ট্রান্স) ও অবস্থান।
  • প্রস্তুতি (নিরুদন): CH3CH2OH → CH2=CH2 (গাঢ় H2SO4, ১৬০-১৭০°C)।
  • প্রস্তুতি (অপসারণ): R-X + KOH(alc) → অ্যালকিন।

বিক্রিয়া ও শনাক্তকরণ

  • প্রধান বিক্রিয়া: ইলেকট্রোফিলিক সংযোজন।
  • ব্রোমিন দ্রবণ (Br2): লাল বর্ণ বর্ণহীন হয়।
  • বেয়ার টেস্ট (KMnO4): গোলাপী বর্ণ বর্ণহীন হয় (ইথিলিন গ্লাইকল তৈরি হয়)।
  • ওজোনোলাইসিস: দ্বিবন্ধনের অবস্থান নির্ণয় করা হয় (কার্বনিল যৌগ তৈরি হয়)।
  • মারকনিকভ নীতি: অপ্রতিসম অ্যালকিনে অপ্রতিসম বিকারকের ঋণাত্মক অংশ কম H-যুক্ত কার্বনে যুক্ত হয়।
  • অ্যান্টি-মারকনিকভ (খারাশ): পারঅক্সাইডের উপস্থিতিতে মারকনিকভের উল্টো নিয়ম (ফ্রি র‍্যাডিক্যাল)।

১৯. অ্যালকাইন (CnH2n-2)

পরিচিতি ও প্রস্তুতি

  • অন্য নাম: অ্যাসিটিলিনস।
  • সংকরায়ন: sp, সরলরৈখিক (১৮০°)।
  • প্রস্তুতি: CaC2 + 2H2O → CH≡CH + Ca(OH)2 (পরীক্ষাগার)।
  • পানি সংযোজন: CH≡CH + H2O → CH3CHO (ইথানল)। (প্রভাবক: 2% HgSO4, 20% H2SO4, ৬০°C)।
  • অন্যান্য অ্যালকাইন + পানি → কিটোন।

বিক্রিয়া ও শনাক্তকরণ

  • অম্লধর্ম: অ্যালকাইন-১ অম্লধর্মী (sp সংকরায়ন)।
  • শনাক্তকরণ (অ্যালকাইন-১):
    • সিলভার নাইট্রেট (AgNO3): সাদা অধঃক্ষেপ।
    • কিউপ্রাস ক্লোরাইড (CuCl): লাল অধঃক্ষেপ।
  • পলিমারকরণ: 3CH≡CH → বেনজিন (Fe নল, ৪০০°C)।
  • ওজোনোলাইসিস: জৈব এসিড উৎপন্ন হয়।

২০. অ্যারোমেটিক যৌগ (বেনজিন)

পরিচিতি ও প্রস্তুতি

  • সংকরায়ন: sp2, C-C দৈর্ঘ্য 0.139 nm।
  • অ্যারোমিটিসিটি (হাকেল তত্ত্ব): সমতলীয়, চাক্রিক, সঞ্চারণশীল (4n+2)π ইলেকট্রন।
  • উৎস: আলকাতরা (কোলটার), পেট্রোলিয়াম।
  • প্রস্তুতি (ফেনল থেকে): C6H5OH + Zn → C6H6 + ZnO
  • প্রস্তুতি (ডিকার্বক্সিলেশন): C6H5COONa + NaOH(CaO) → C6H6

বিক্রিয়া (ইলেকট্রোফিলিক প্রতিস্থাপন)

  • নাইট্রেশন: গাঢ় HNO3 + H2SO4 (৬০°C) → নাইট্রোবেনজিন।
  • সালফোনেশন: ধূমায়িত H2SO4 (SO₃) → বেনজিন সালফোনিক এসিড।
  • ফ্রিডেল-ক্রাফট অ্যালকাইলেশন: R-Cl + অনাদ্র AlCl3 → টলুইন।
  • ফ্রিডেল-ক্রাফট অ্যাসাইলেশন: R-CO-Cl + অনাদ্র AlCl3 → অ্যাসিটোফেনোন।
  • সংযোজন (গ্যামাক্সিন): 3Cl2 (UV আলো) → বেনজিন হেক্সাক্লোরাইড (লিনডেন)।
মনে রাখার কৌশল (নির্দেশক):
  • অর্থো-প্যারা (Single Bond): -OH, -NH2, -R, -X (হ্যালোজেন)।
  • মেটা (Double Bond): -NO2, -SO3H, -CN, -COOH, -CHO, -CO-R

২১. অ্যালকাইল ও অ্যারাইল হ্যালাইড

অ্যালকাইল হ্যালাইড (R-X)

  • গ্রোভস পদ্ধতি: R-OH + HCl(ZnCl2) → R-Cl
  • বিক্রিয়া: SN (প্রতিস্থাপন) ও E (অপসারণ)।
  • গ্রিগনার্ড বিকারক: R-X + Mg → R-MgX (শুষ্ক ইথার)।
  • সায়জেফ নীতি (অপসারণ): কম H-যুক্ত কার্বন থেকে H অপসারিত হয়ে প্রধান উৎপাদ (বেশি স্থিতিশীল অ্যালকিন) তৈরি হয়।
  • ব্যবহার: ফ্রিয়ন (CF2Cl2 - হিমায়ক), টেফলন (PTFE - ননস্টিক), DDT (কীটনাশক)।

গ্রিগনার্ড বিকারকের (R-MgX) বিক্রিয়া

  • H2O এর সাথে → R-H (অ্যালকেন)
  • CO2 এর সাথে → R-COOH (কার্বক্সিলিক এসিড)
  • ফরমালডিহাইড (HCHO) → অ্যালকোহল
  • অন্যান্য অ্যালডিহাইড (R-CHO) → অ্যালকোহল
  • কিটোন (R-CO-R) → অ্যালকোহল

২২. অ্যালকোহল ও ফেনল

অ্যালকোহল (R-OH)

  • জারণ: 1°R-OH → R-CHO → R-COOH; 2°R-OH → R-CO-R (কিটোন)।
  • বিজারণ: R-CHO/R-CO-R/R-COOH → R-OH (LiAlH₄ দ্বারা)।
  • গাঁজন (Fermentation): স্টার্চ → মল্টোজ → গ্লুকোজ (ইনভার্টেজ) → ইথানল (জাইমেজ)।
  • রেকটিফাইড স্পিরিট: 95.6% ইথানল + 4.4% পানি।
  • মিথিলেটেড স্পিরিট: রেকটিফাইড স্পিরিট + মিথানল + পিরিডিন (বার্নিশের কাজে)।
  • পাওয়ার অ্যালকোহল: বিশুদ্ধ ইথানল + বেনজিন + পেট্রোল।
  • হ্যালোফর্ম বিক্রিয়া: CH3-CH(OH)- মূলক থাকলে দেয় (ইথানল, প্রোপানল-২)।
  • লুকাস বিকারক (ZnCl2+HCl): 1°, 2°, 3° অ্যালকোহল পার্থক্যকরণে। (3° দ্রুত, 2° ৫-১০মি., 1° বিক্রিয়া করে না)।

ফেনল (কার্বলিক এসিড)

  • বৈশিষ্ট্য: অম্লধর্মী (pKa=10), জীবাণুনাশক (1%) ও অ্যান্টিসেপটিক (0.2%)।
  • প্রস্তুতি: ডাউ পদ্ধতি (ক্লোরোবেনজিন), কিউমিন পদ্ধতি (আধুনিক)।
  • শনাক্তকরণ (FeCl₃): বেগুনী বর্ণ ধারণ করে।
  • লিবারম্যান পরীক্ষা: নীল → লাল → নীল।
  • কোব বিক্রিয়া (Kolbe): স্যালিসাইলিক এসিড তৈরি হয়।
  • রাইমার-টাইম্যান বিক্রিয়া: স্যালিসাইল অ্যালডিহাইড তৈরি হয়।
  • ব্যাকেলাইট: ফেনল + ফরমালডিহাইড পলিমার।

২৩. ইথার (R-O-R)

  • সংকরায়ন: sp3, বন্ধন কোণ ১১০°।
  • উইলিয়ামসন সংশ্লেষণ: R-ONa + R-X → R-O-R + NaX
  • অ্যালকোহল থেকে: 2R-OH → R-O-R (গাঢ় H2SO4, ১৪০°C)।
  • বৈশিষ্ট্য: অ্যালকোহলের চেয়ে কম সক্রিয়, স্ফুটনাঙ্ক কম, পোলার কিন্তু H-বন্ধন গঠন করে না।
  • বিস্ফোরণ: বায়ুর O2 এর সাথে বিস্ফোরক পারঅক্সাইড (R2O2) তৈরি করে।
  • শনাক্তকরণ: Na, PCl₅, HCl এর সাথে বিক্রিয়া করে না।

২৪. অ্যালডিহাইড ও কিটোন (>C=O)

প্রস্তুতি ও বিক্রিয়া

  • রোজেনমুন্ড বিজারণ: R-COCl → R-CHO (H₂, Pd-BaSO₄)।
  • ইটার্ড বিক্রিয়া: টলুইন → বেনজালডিহাইড।
  • ফরমালিন: ফরমালডিহাইডের ৪০% জলীয় দ্রবণ।
  • হেক্সামিন (ইউরোট্রপিন): HCHO + NH3 → হেক্সামিন (মূত্রাশয়ের প্রদাহে ব্যবহৃত)।
  • হ্যালোফর্ম বিক্রিয়া: CH3-CO- মূলকযুক্ত যৌগ দেয় (অ্যাসিটোন, ইথান্যাল)।
  • অ্যালডল ঘনীভবন: α-H যুক্ত অ্যালডিহাইড/কিটোন দেয় (লঘু ক্ষার)।
  • ক্যানিজারো: α-H বিহীন অ্যালডিহাইড (HCHO, বেনজালডিহাইড) দেয় (গাঢ় ক্ষার)।

শনাক্তকরণ

  • ২,৪-DNP (ব্রাডির বিকারক): কার্বনিল মূলক শনাক্ত করে (কমলা/হলুদ অধঃক্ষেপ)।
  • টলেন বিকারক: অ্যালডিহাইড শনাক্ত করে (সিলভার দর্পণ)। কিটোন দেয় না।
  • ফেহলিং দ্রবণ: অ্যালডিহাইড শনাক্ত করে (Cu₂O এর লাল অধঃক্ষেপ)। কিটোন দেয় না।

২৫. অ্যামিন (R-NH2)

পরিচিতি ও প্রস্তুতি

  • বৈশিষ্ট্য: ক্ষারধর্মী, মাছের আঁশটে গন্ধযুক্ত।
  • ক্ষারধর্মিতা (অ্যালিফেটিক): 2° > 1° > 3° > NH3
  • হফম্যান ক্ষুদ্রাংশকরণ: R-CONH2 + Br2 + NaOH → R-NH2 (১ কার্বন কম)।

শনাক্তকরণ ও পার্থক্য

  • কার্বিল অ্যামিন পরীক্ষা ( অ্যামিন): CHCl3 + KOH সহ তাপে উগ্র গন্ধযুক্ত কার্বিল অ্যামিন/আইসোসায়ানাইড (R-NC) তৈরি করে।
  • HNO2 দ্বারা পার্থক্য:
    • : R-OH + N2 (গ্যাস)
    • : হলুদ তৈলাক্ত নাইট্রোসোঅ্যামিন।

২৬. কার্বক্সিলিক এসিড ও জাতক

কার্বক্সিলিক এসিড (R-COOH)

  • উৎস: মাখন (বিউটানোয়িক), ভিমরুল (ফরমিক), পাম তেল (পামিটিক)।
  • প্রস্তুতি: গ্রিগনার্ড বিকারক + CO2; R-CN এর আর্দ্রবিশ্লেষণ।
  • তীব্রতা: Cl-CH2COOH > H-COOH > CH3-COOH
  • শনাক্তকরণ: লিটমাস টেস্ট, NaHCO3 (CO₂ এর বুদবুদ)।

এসিড জাতক (এস্টার, অ্যামাইড)

  • এস্টার (R-COOR): ফলের সুগন্ধ। (অ্যাসিড + অ্যালকোহল)।
  • উৎস: পাকা কলা, কমলা, আনারস।
  • অ্যামাইড (R-CONH2): প্রোটিন সংশ্লেষণ, নাইলন তৈরিতে।
  • প্যারাসিটামল: একটি অ্যামাইড যৌগ, বেদনানাশক।

২৭. পলিমার ও অন্যান্য

পলিমার

  • প্রাকৃতিক: স্টার্চ, সেলুলোজ, প্রোটিন, DNA।
  • কৃত্রিম (যুত): পলিথিন, PVC, টেফলন, পলিস্ট্যারিন।
  • কৃত্রিম (ঘনীভবন): নাইলন, ব্যাকেলাইট, মেলামাইন।
  • থার্মোপ্লাস্টিক (নরম): পলিথিন, PVC (পুনরায় ব্যবহারযোগ্য)।
  • থার্মোসেটিং (শক্ত): ব্যাকেলাইট, মেলামাইন (পুনরায় ব্যবহারযোগ্য নয়)।

গুরুত্বপূর্ণ যৌগ

  • গ্লিসারিন: অ্যাক্রোলিন টেস্ট দেয় (বিশ্রী গন্ধ)।
  • নাইট্রোগ্লিসারিন: ডিনামাইট, কর্ডাইট তৈরিতে।
  • TNT: ট্রাই-নাইট্রো-টলুইন, বিস্ফোরক।
  • ডেটল: ৪-ক্লোরো-৩,৫-ডাইমিথাইল ফেনল (প্রধান উপাদান)।
  • প্যারাসিটামল: N-(4-হাইড্রোক্সিফিনাইল)অ্যাসিট্যামাইড, গলনাঙ্ক ১৬৯°C।
মনে রাখার কৌশল (PVC ব্যবহার):

"ভিসি সাহেব স্বপ্নে দেখলেনঃ তিনি একদিন ডাক্তার হয়ে গেছেন, তাই তিনি প্লাস্টিকের সিরিঞ্জ নিয়ে রেইনকোট গায়ে দিয়ে ছাদে চলে গেলেন, কার্পেট বিছিয়ে ... গ্রামোফোনে তিলাওয়াত রেকর্ড করলেন।"